নিকলী হাওর

nikli haor kishoreganj

নিকলী হাওর (Nikli Haor) বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। এর আয়তন প্রায় ৫৫ বর্গ কিলোমিটার। নিকলী হাওর প্রায় ৩০০টি ছোট-বড় গ্রামকে ঘিরে অবস্থিত। এই হাওরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। নিকলী হাওর বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে নিকলী হাওর ২৪°৩০’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। নিকলী হাওর থেকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার।

নিকলী হাওরের প্রধান আকর্ষণ হলো এর বিস্তীর্ণ জলরাশি। এই হাওরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। নিকলী হাওরে মাছ ধরার দৃশ্য খুবই মনোরম। নিকলী হাওরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী।

বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে নিকলী হাওর। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক নিকলী হাওর ভ্রমণ করেন। নিকলী হাওরে নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা, ক্যাম্পিং এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রম করা যায়।

নিকলী হাওড় কিভাবে যাব

নিকলী হাওর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। ঢাকা থেকে নিকলী হাওরে যেতে বাস বা ট্রেন নিতে পারেন।

বাসে:

  • ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসগুলো সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা।
  • কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলীগামী বাসগুলো কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা।

ট্রেনে:

  • ঢাকা থেকে ভৈরবগামী ট্রেন নিয়ে ভৈরব পৌঁছান। ভৈরব থেকে নিকলীগামী সিএনজি বা বাস নিতে পারেন।

ঢাকা থেকে নিকলী হাওরে যাওয়ার একটি সম্পুর্ন গাইডলাইন:

  • ঢাকা থেকে সকাল ৯:০০ টায় কিশোরগঞ্জগামী বাস নিন। বাসটি দুপুর ১২:০০ টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে।
  • কিশোরগঞ্জ থেকে দুপুর ১২:৩০ টায় নিকলীগামী বাস নিন। বাসটি ১:৩০ টায় নিকলী পৌঁছাবে।
  • নিকলীতে হোটেলে চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে নিন।
  • বিকাল বেলায় নিকলী হাওরে নৌকা ভ্রমণ করুন।
  • সন্ধ্যা বেলায় নিকলী উপজেলায় থাকার ব্যবস্থা করুন
  • পরেরদিন সকালে নিকলী হাওরে মাছ ধরার জন্য বের হন।
  • দুপুর বেলায় নিকলী উপজেলায় খাবার খান।
  • দুপুরের পর নিকলী হাওরে ক্যাম্পিং করে রাতের আকাশ উপভোগ করুন।
  • পরেরদিন সকালে ক্যাম্পিং থেকে উঠে নিকলী হাওরে কিছু সময় কাটিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিন।

এই পথটি অনুসরণ করলে আপনি নিকলী হাওরে (Nikli Haor) একদিনের ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি দুই দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে দ্বিতীয়দিনের সকালে নিকলী হাওরে বোটিং ভ্রমণ করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

নিকলী হাওরে থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। নিকলী উপজেলায় এবং হাওরের বেড়িবাঁধের কাছে বেশ কয়েকটি হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। এসব হোটেল এবং রিসোর্টে আপনি বিভিন্ন ধরনের থাকার ব্যবস্থা পাবেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • রুমের ব্যবস্থা: নিকলী হাওরে বিভিন্ন ধরনের রুমের ব্যবস্থা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাধারণ রুম, সুইট রুম, এবং ভিলা। সাধারণ রুমে থাকার খরচ প্রতি রাতে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, সুইট রুমে থাকার খরচ প্রতি রাতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, এবং ভিলায় থাকার খরচ প্রতি রাতে ৫০০০ থেকে ১০০০০ টাকা।
  • রিসোর্টের ব্যবস্থা: নিকলী হাওরে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট রয়েছে। রিসোর্টে থাকার খরচ প্রতি রাতে ২৫০০ থেকে ১০০০০ টাকা।

নিকলী হাওরে থাকার জন্য কিছু জনপ্রিয় হোটেল এবং রিসোর্টের নাম:

  • নিকলী উপজেলায়:
    • নিকলী হোটেল
    • নিকলী রিসোর্ট
  • হাওরের বেড়িবাঁধের কাছে:
    • জলতরঙ্গ রিসোর্ট
    • নিকলী হাওর রিসোর্ট
    • নিকলী মাছ ধরার রিসোর্ট

আপনি যদি বাজেট কম থাকে, তাহলে আপনি নিকলী উপজেলায় থাকার ব্যবস্থা নিতে পারেন। এছাড়াও, আপনি হাওরে নৌকা ভ্রমণের সময় ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারেন।

নিকলী হাওরে খাওয়ার ব্যবস্থা 

হাওরে খাবারের ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। নিকলী উপজেলায় এবং হাওরের বেড়িবাঁধের কাছে বেশ কয়েকটি হোটেল এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে। এসব হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় আপনি বিভিন্ন ধরনের খাবার পাবেন, যার মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, সবজি, ভাত, ডাল, ইত্যাদি।

নিকলী হাওরের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো মাছ। নিকলী হাওরে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে কাতলা, রুই, মৃগেল, শোল, ইলিশ, ইত্যাদি। আপনি হাওরে নৌকা ভ্রমণের সময় মাছ ধরতে পারেন এবং নিজের হাতে ধরা মাছ খেতে পারেন।

নিকলী হাওরে খাবারের দাম মোটামুটি সাশ্রয়ী। আপনি একেক জনের জন্য ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ভালো মানের খাবার খেতে পারবেন।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়

নিকলী হাওরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকালে (জুন-আগস্ট)। এই সময় হাওর পানিতে পূর্ণ থাকে এবং নৌকা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। এছাড়াও, এই সময় হাওরে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফোটে, যা দৃশ্যটিকে আরও মনোরম করে তোলে।

শীতকালে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) হাওর পানি কমে যায়। তবে এই সময় হাওরের চারপাশের গ্রামীণ দৃশ্য খুবই সুন্দর দেখা যায়।

বসন্তকালে (মার্চ-মে) হাওরের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফোটে। তবে এই সময় হাওর পানিতে পূর্ণ থাকে না।

গ্রীষ্মকালে (জুন-আগস্ট) হাওর পানিতে পূর্ণ থাকে এবং নৌকা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে এই সময় হাওরের জলবায়ু খুবই গরম এবং আর্দ্র থাকে।

সুতরাং, আপনি যদি নিকলী হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি এবং নৌকা ভ্রমণের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে বর্ষাকালে (জুন-আগস্ট) নিকলী হাওর ভ্রমণের জন্য যেতে পারেন।

আশে পাশের দর্শনীয় স্থান

নিকলী হাওর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি বিখ্যাত হাওর। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। নিকলী হাওরের আশেপাশে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • পাহাড় খাঁর মাজার: নিকলী হাওরের (Nikli Haor) কাছেই অবস্থিত পাহাড় খাঁর মাজারটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। পাহাড় খাঁ ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা এবং মাজারে তার সমাধি রয়েছে।
  • গুরই শাহী জামে মসজিদ: নিকলী উপজেলার গুরই গ্রামে অবস্থিত গুরই শাহী জামে মসজিদটি একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।
  • সুতাহার বৌদ্ধ বিহার: নিকলী হাওরের কাছেই অবস্থিত সুতাহার বৌদ্ধ বিহার একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। এটি ১৭শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।
  • হরিণঘাট ব্রিজ: নিকলী হাওরের কাছেই অবস্থিত হরিণঘাট ব্রিজ একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। এটি ২০১৫ সালে নির্মিত হয়েছিল।
  • হাওর রিসোর্ট: নিকলী হাওরের (Nikli Haor) কাছেই অবস্থিত হাওর রিসোর্ট একটি আধুনিক রিসোর্ট। এখান থেকে আপনি হাওরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • কিশোরগঞ্জ শহর: কিশোরগঞ্জ শহরটি নিকলী হাওর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ শহরে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
    • ইসলামপুরের ঐতিহাসিক মসজিদ: ইসলামপুরের ঐতিহাসিক মসজিদটি একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।
    • কিশোরগঞ্জ সরকারি কলেজ: কিশোরগঞ্জ সরকারি কলেজটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন কলেজ। এটি ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
    • কিশোরগঞ্জ জেলা জাদুঘর: কিশোরগঞ্জ জেলা জাদুঘরটি বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জাদুঘর। এটি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

নিকলী হাওর ভ্রমণের সময় আপনি এসব দর্শনীয় স্থানও পরিদর্শন করতে পারেন। এছাড়াও, নিকলী হাওরের আশে পাশে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এই গ্রামগুলোর মানুষ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ। আপনি চাইলে এসব গ্রামে ঘুরে দেখতে পারেন।

ভ্রমন টিপস ও সতর্কতা

  • সাঁতার না জেনে পানিতে না নামা: নিকলী হাওর একটি বিস্তীর্ণ জলাশয়। তাই, সাঁতার না জেনে পানিতে নামা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • চলন্ত নৌযানে/নৌকার কিনারায় বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান না করা: চলন্ত নৌযানে/নৌকার কিনারায় বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে নৌকা থেকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • যাত্রার নিরাপদের নিমিত্ত নিজের সুরক্ষায় লাইফ জ্যাকেট বা পানিতে জীবন রক্ষাকারী উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিত করা: নিকলী হাওর একটি বিস্তীর্ণ জলাশয়। তাই, নৌকা ভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট বা পানিতে জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে জীবন রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
  • বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারের কাছাকাছি স্থানে নৌকা গমণে সতর্কতা অবলম্বন করা: নিকলী হাওরের কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারের কাছাকাছি স্থানে নৌকা চলাচল করে। এসব স্থানে নৌকা গমণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
  • সন্ধ্যার পর এবং বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে নৌকায় ভ্রমণ না করা: নিকলী হাওর (Nikli Haor) একটি বিস্তীর্ণ জলাশয়। তাই, সন্ধ্য্যার পর এবং বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে নৌকায় ভ্রমণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
  • অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন, ভ্রমণ, খাদ্যগ্রহণ এবং কোনো অচেনা স্থানে ভ্রমণ না করা: নিকলী হাওর একটি জনবহুল এলাকা। তাই, অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন, ভ্রমণ, খাদ্যগ্রহণ এবং কোনো অচেনা স্থানে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুন
ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক
ঘুড়ে আসুন ফয়েজ লেক থেকে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সাদা পাথর ভোলাগঞ্জ

 

Rate this post

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here