সাদা পাথর ভোলাগঞ্জ

সাদা পাথর ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ ( Volagonj ) বর্তমানে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সিলেট  জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সাদা পাথর অবস্থিত। ভোলাগঞ্জের পাশেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুবিশাল পাহাড় পর্বত। যেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে যেমন ধলাই নদের পানির প্রধান উৎস তেমনি এই নদের স্রোতই ভোলাগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল উৎস। সাদা পাথরের আশে পাশের সবুজ পাহাড় , ঘন মেঘ আর পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের সাথে মিশে ভোলাগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেনো আরো হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। যা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে।

সাদা পাথর দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মত। ধলাই নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করে দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পূনরায় আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদের পানির সাথে ভারত থেকে প্রচুর পরিমানে পাথর নেমে আসে। ধলাই নদের পাথর পরিবেষ্টিত যায়গাটুকুই ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা সাদা পাথর নামে পরিচিত।  এই পাথর যেনো সহজে ধলাই নদ থেকে উত্তোলন করা যায় সেই জন্য ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জে রোপওয়ে নির্মান করা হয়। প্রায় সোয়া ১১ মাইল লম্বা এই রোপওয়ে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত অবস্থিত যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যবহারিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই রোপওয়ে গুলো এখন আর ব্যবহারিত হয় না। যদিও এখন আর এই রোপওয়ে গুলো ব্যবহারিত হচ্ছে না কিন্তু এখনো এই ভোলাগঞ্জে প্রচুর পরিমানে পাথর উত্তোলন হয়ে থাকে। এমনকি স্থানীয় অনেক বাসিন্দাদের জীবিকার প্রাথমিক উৎস এই পাথর উত্তোলন। আপনি যদি সাদা পাথর ভ্রমনে যান তাহলে দেখতে পারবেন ১০ নং ঘাট থেকে ছোট ছোট নৌকায় করে পাথর বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 

ভোলাগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্তে একটি কাস্টম স্টেশন রয়েছে যেখানে দিয়ে সাধারনত চুনাপাথর আমদানী করা হয়ে থাকে। এই কাস্টম স্টেশন দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত ট্রাক  চুনাপাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। 

ভোলাগঞ্জ ভ্রমনের উপযুক্ত সময়ঃ

আপনি যদি সাদা পাথরের সৌন্দর্য সম্পূর্ন ভাবে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই বর্ষাকালে এবং তার পরবর্তী কিছু মাসে ভ্রমণ করা উচিত। কারন এই সময় ভোলাগঞ্জে আপনি প্রচুর পরিমানে পানি দেখতে পারবেন ধলাই নদে যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। বর্ষাকাল ছাড়াও আপনি এই জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন কিন্তু তখন পানির প্রবাহ তুলুনামূলক অনেক কম থাকে।

কিভাবে ভোলাগঞ্জ যাবেনঃ  

সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকেই ভ্রমণ করতে চান না কেন আপনাকে প্রথমে সিলেট শহরে আসতে হবে। তারপর সিলেট থেকে আপনার পছন্দ মত যানবাহন নিয়ে আপনি ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ভ্রমণ করতে পারবেন। 

আপনি যদি ঢাকা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে চান তাহলে আপনি বাস বা ট্রেনে করে সিলেট যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে কমলাপুর অথবা বিমান বন্দর স্টেশন থেকে উপবন , পারাবত , অথবা কালনী এক্সপ্রেসে করে যেতে পারবেন।

সিলেট থেকে যেভাবে ভোলাগঞ্জে যাবেনঃ

সিলেটের আম্বরখানা থেকে সিএনজি অথবা মজুমদারী এলাকা থেকে আপনি ভোলাগঞ্জে যাওয়ার জন্য  লোকাল বাস ,  টুরিস্ট বাস অথবা বিআরটিসি পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত প্রতি ২০ মিনিট পর পর এই বাস ভোলাগঞ্জের উদ্দ্যেশে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়। এই সব বাসে করে আপনি জনপ্রতি ৭০/৮০ টাকা করে আপনি ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে যেতে পারবেন। আপনি চাইলে সিএনজি তে করে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ১৫০/২০০ টাকার মত পরবে। অথবা আপনি চাইলে রিজার্ভ সিএনজি ও নিতে পারবেন যাওয়া আসার জন্য সেক্ষেত্রে ১৩০০/১৫০০ টাকার মত খরচ হবে। একটি সিএনজিতে  ৫ জন যেতে পারবেন।

আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে প্রায় ১.৩০ ঘন্টার মত লাগবে। ভোলাগঞ্জে পৌছে আপনাকে যেতে হবে ১০ নাম্বার নৌকা ঘাটে। এখান থেকে সাদা পাথর আসা যাওয়ার জন্য  নৌকা পেয়ে যাবেন। ভাড়া আনুমানিক ৮০০/১০০০ টাকার মত পরবে। প্রতি নৌকায় সর্বোচ্চ ১০ জনের মত যেতে পারবেন। আপনি যদি একা বা কম মানুষ নিয়ে সাদা পাথর ভ্রমনে যান সেক্ষেত্রে শেয়ারের মাধ্যমেও নৌকা ভাড়া করে সাদা পাথর ভ্রমণ করতে পারবেন। সাদা পাথর পৌছে আপনার ইচ্ছা মত সময় নিয়ে আসে পাশে ঘোরাফেরা করুন। অবে অবশ্যই নৌকার মাঝির নাম্বারটা নিয়ে আসবেন। যাতে প্রয়োজনের সময় সাত সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

এছাড়াও আপনি চাইলে ট্রলার বা নৌকার মাধয়মেও সাদা পাথর যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে সিলেট শহর থেকে টুকের বাজার যেতে হবে। টুকের বাজার থেকে সাদা পাথর যাওয়ার জন্য ট্রলার পেয়ে যাবেন। অথবা বর্ষাকালে ছাতক থেকে নৌকার মাধ্যমেও আপনি সাদা পাথর যেতে পারবেন। 

কোথায় খাবেনঃ

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের আসে পাশে কিংবা ১০ নং ঘাটে তেমন কোনো ভালো মানের খাবার হোটেল নেই । সেখানে আপনি দেশীয় খাবার কিংবা ভাত মাছ খাওয়ার মত সাধারন কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন। ভোলাগঞ্জ যাওয়ার পথে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।  আপনারা চাইলে সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। তবে আপনি যদি সাদা পাথরে দুপুরের খাবার খেতে চান তাহলএ সেখানকার স্থানীয় খাবার হোটেল গুলোই ভরসা।

কোথায় থাকবেনঃ

কোম্পানীগঞ্জ বা ভোলাগঞ্জে থাকার মত ভালো তেমন কোনো হোটেল নেই। আপনি যদি কোনো কারনে রাত্রিযাপন করতে চান তাহলে কোম্পানীগঞ্জ সদরে যেতে হবে। সেখানে আপনার বাজেট অনুসারে বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন রাত্রিযাপন করার জন্য। এছাড়াও সেখানে জেলা পরিষদের একটি ডাক বাংলো রয়েছে।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থানঃ

আপনি যদি সাদা পাথর ভ্রমণ করতে যান তাহলে অবশ্যই উৎমাছড়া , তুরুংছড়া এই যায়গা গুলো ভ্রমণ করে আসবেন। প্রাকৃতিক এই দুটি স্থান খুবই সুন্দর। যদিও এই দুটি স্থান বর্ষাকাল ছাড়া না যাওয়াই উত্তম। বর্ষাকালে গেলে আপনি এই দুটি পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য আরো ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপসঃ

  • সাদা পাথর যেহেতু সীমান্তবর্তো যায়গায় অবস্থিত তাই সাবধানে থাকবেন।
  • যানবাহনের ভাড়া অবশ্যই ভালো ভাবে দরদাম করে নিবেন।
  • কম খরচে যদি ঘুড়তে চান তাহলে অবশ্যই গ্রুপের সাথে ঘুড়বেন।
  • চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসার
  • নৌকার মাঝিকে জানিয়ে রাখুন আপনারা কতক্ষন সাদা পাথরে অবস্থান করবেন। 
  • বর্ষাকালে নদীতে প্রচুর স্রোত থাকে। তাই আপনি যদি সাতার না জানেন তাহলে পানিতে নামার মত ভুল করবেন না।
  • নগদ টাকা বহন করুন: ভোলাগঞ্জের আশেপাশের অনেক জায়গা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড গ্রহণ নাও করতে পারে । 
  • পরিবেশকে সম্মান করুন: সাদা পাথর একটি সুন্দর প্রাকৃতিক এলাকা। তাই দয়া করে ধলাই নদে কিংবা পানিতে ময়লা ফেলবেন না। 

সতর্কতাঃ

সময়ের সাথে সাথে হোটেল, রিসোর্ট, গাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য পরিষেবার মূল্য পরিবর্তনের কারণে ভ্রমণ একাডেমীতে দেওয়া তথ্য সঠিক নাও হতে পারে। অতএব, ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে অনুগ্রহ করে সাম্প্রতিক ভাড়া এবং খরচের তথ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। এছাড়াও  বিভিন্ন ট্রাস্টেড মিডিয়া থেকে  আপনার সুবিধার জন্য, হোটেল, রিসর্ট, গাড়ি এবং যোগাযোগের অন্যান্য উপায়গুলির জন্য মোবাইল নাম্বার গুলি ও প্রদান করা হয়েছে৷ এই মোবাইল নাম্বার গুলো ব্যবহার করার আগে সমস্ত আর্থিক লেনদেন অবশ্যই যাচাই করা উচিত। ভ্রমণ একাডেমী কোনো সমস্যা বা আর্থিক ক্ষতির জন্য দায়ী নয়

আরো পড়ুন
ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক
ঘুড়ে আসুন ফয়েজ লেক থেকে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সাদা পাথর ভোলাগঞ্জ

তথ্যসুত্রঃ Wikipedia

Rate this post
Share your love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *